আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও বাংলাদেশের নির্বাচন: আওয়ামী লীগের অপরিহার্যতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জোরালো বার্তা

📝 ইঞ্জিঃ খশরুল আলম পলাশ, ঢাকা, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫:
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক মন্তব্য আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। রয়টার্স এবং এএফপি-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, এবং এমন পদক্ষেপ দেশের গণতন্ত্রের জন্য আত্মঘাতী হবে। প্রধানমন্ত্রীর এই কঠোর অবস্থান আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এবং দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক মহলে গভীর মনোযোগ সৃষ্টি করেছে।
আন্তর্জাতিক মহলে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, আওয়ামী লীগ দেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক শক্তি এবং এই দলের লাখ লাখ সমর্থক রয়েছে। যদি এই দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া হয়, তবে তাদের সমর্থকরা সেই নির্বাচন বর্জন করবে, যা নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। রয়টার্সকে তিনি এই পরিস্থিতিকে কেবল “অবিচারই নয়, এটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, একটি গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য নির্বাচনী বৈধতা অপরিহার্য। এই বৈধতা অর্জন করতে হলে সব প্রধান রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও তিনি একই সুর বজায় রেখে সতর্ক করে দেন যে, বড় দলগুলোকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করা হলে তা **”দেশে ভবিষ্যৎ বিভেদের বীজ বপন করা”**র নামান্তর হবে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক হিসেবে দেখছে, যেখানে নির্বাচনকালীন অস্থিরতা এবং প্রধান দলগুলোর মধ্যেকার অচলাবস্থা নিরসনে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অপরিহার্যতা
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মূল ফোকাস হলো, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক এবং বর্তমান গুরুত্ব। আওয়ামী লীগ শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, বরং এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল এবং দীর্ঘ সময় ধরে দেশের ক্ষমতায় থাকা একটি দল। জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ ঐতিহ্যগতভাবে এই দলকে সমর্থন করে। এই কারণে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করেন যে, আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচন বর্জন করে বা তাকে বাদ দেওয়া হয়, তবে সেই নির্বাচন তার জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক চরিত্র হারাবে। একটি একতরফা বা দুর্বল অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেতে ব্যর্থ হতে পারে এবং পরবর্তীতে সরকার পরিচালনায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সমর্থন পেতে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্তব্যের মাধ্যমে মূলত এই বাস্তবতাকে সামনে এনেছেন যে, একটি স্থিতিশীল ও কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সম্মিলিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা আবশ্যক। এই অপরিহার্যতা কেবল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক শক্তির কারণে নয়, বরং একটি অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের ভিত্তি রক্ষার জন্যই প্রয়োজন।
এদিকে গতকাল আন্তর্জাতিক ও প্রভাবশালী একাধিক গনমাধ্যমে যথেষ্ঠ গুরুত্বের সাথে শেখ হাসিনার বার্তা ও আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রযোজনীয়তার প্রতিবেদন প্রকাশিত হবার পর থেকেই আন্তর্জাতিক ও জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গন পুণরায় সরব হয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতা কর্মীরা- “নো ইলেকশন উইথআউট শেখ হাসিনা” বা একই ধরনের বিভিন্ন বার্তা বা দাবী প্রচার করছেন। থেমে নেই জুলাই আন্দোলনের পক্ষের সমর্থকরাও, তারাও বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগ বিহীন নির্বাচনের পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন।


