নড়াইল-২, ‘ভাড়াটিয়া’ বা জোট প্রার্থী: ক্ষুব্ধ জনতা, বাধাগ্রস্ত স্থানীয় রাজনীতি ও উন্নয়ন!
নড়াইল: নড়াইল-২ আসনে দল নির্বিশেষে কেন্দ্র থেকে জোটের বা বাইরের প্রার্থী মনোনয়নের দীর্ঘদিনের প্রবণতা স্থানীয় রাজনীতি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নকে বারবার বাধাগ্রস্ত করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই আসনে ‘ভাড়াটিয়া’ বা জোট প্রার্থীর কারণে স্থানীয় জনগণ ক্ষিপ্ত ও হতাশ। ভোটারদের মতে, বাইরের প্রার্থীরা এলাকার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা সঠিকভাবে বুঝতে পারেন না, ফলে উন্নয়ন প্রক্রিয়াও কাঙ্ক্ষিত গতি পায় না।
নড়াইল-২ আসনে বিগত কয়েকটি সংসদ নির্বাচনে প্রধান দলগুলো থেকে যারা প্রার্থী হয়েছিলেন, তাদের তালিকা এই আসনে স্থানীয় রাজনীতিতে ‘বহিরাগত’ বা জোটের প্রার্থীর প্রভাবের বিষয়টি স্পষ্ট করে:
⚫ নির্বাচন
২০২৪ (দ্বাদশ) ও ২০১৮ (একাদশ)
মাশরাফি বিন মর্তুজা
২০১৪ (দশম)
শেখ হাফিজুর রহমান
২০০৮ (নবম)
এসকে আবু বাকের
২০০২ (উপ-নির্বাচন)
শহীদুল ইসলাম
২০০১ (অষ্টম)
শেখ হাসিনা
উপরের তালিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও এই আসনে বিভিন্ন সময়ে (যেমন ২০১৪ সালে) আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো স্থানীয় প্রার্থী না দিয়ে জোটের শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে এই আসনে ইসলামী ঐক্যজোট বা ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মতো শরিক দলের প্রার্থীদের বারবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তারকা ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজাকে মনোনয়ন দেয়, যিনি জনপ্রিয়, সুপরিচিত ও স্থানীয় হলেও পেশাগতভাবে রাজনীতিতে বাইরের ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। এই ধরনের মনোনয়ন স্থানীয় সক্রিয় নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা ও স্থানীয় গ্রুপগত কোন্দল তৈরি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই আসনে বিভিন্ন সময়ে বড় দলগুলো নিজেদের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের উপেক্ষা করে জোটের শরিক দল বা স্থানীয়ভাবে কম পরিচিত বা কম সম্পৃক্ত মুখকে প্রার্থী করেছে।
স্থানীয় ত্যাগী ও যোগ্য নেতারা বারংবার মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর ফলে স্থানীয় রাজনীতিতে হতাশা ও বিভেদ বাড়ছে। স্থানীয় সম্পৃক্ততা বা সক্রিয়তার বাইরের প্রার্থীর কারণে নিজ দলের মধ্যেই অন্তর্দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। স্থানীয় নেতারা মনে করেন, বহিরাগত প্রার্থীকে জেতাতে কাজ করার ফলে তাদের নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
দীর্ঘকাল ধরে স্থানীয় নেতৃত্ব তৈরি হতে না পারায় তৃণমূল পর্যায়ে রাজনীতির ভিত দুর্বল হচ্ছে।
এখানকার সাধারণ ভোটারদের মধ্যে একটা চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের মতে, তারা ভোট দিয়ে এমন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করছেন, যিনি কেন্দ্রে থাকেন বা জাতীয় ইস্যুতে বেশি মনোযোগ দেন, কিন্তু স্থানীয় চাহিদা পূরণে তিনি ততটা উদ্যোগী নন।
“আমরা চাই আমাদের এলাকার একজন মানুষ আমাদের নেতৃত্ব দিক। যিনি আমাদের দুঃখ-কষ্ট বুঝবেন। কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া প্রার্থীর কারণে আমরা ভোটের অধিকার পেলেও আমাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হচ্ছে না,” জানান লোহাগড়ার একজন প্রবীণ ভোটার।
বিগত প্রতিবারের মতো এবারেও বিএনপি নড়াইল ২ আসনে এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর মনোনয়নের ঘোষনা দেয়নি। জানা যাচ্ছে এবারেও তারা কোনো জোট বা শরীক প্রার্থীর জন্য আসনটি খালি রেখেছে।
নড়াইল-২ আসনের আপামর জনগণের দাবি, রাজনৈতিক দলগুলো যেন জোটের সমীকরণ বা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে না দিয়ে যোগ্য ও স্থানীয় নেতাদের মনোনয়ন দেয়। এর ফলে স্থানীয় রাজনীতি চাঙ্গা হবে, দলীয় সম্প্রীতি বজায় থাকবে এবং এলাকার উন্নয়ন নতুন গতি পাবে। কেন্দ্রকে স্থানীয় জনগণের এই আবেগ ও দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের হতাশা দূর করার আহ্বান জানিয়েছে নড়াইল-২ আসনের সচেতন মহল।

