আজ শুক্রবার (২১ নভেম্বর, ২০২৫) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল
নরসিংদীর মাধবদীতে, যার মাত্রা ছিল ৫.৭ (ইউএসজিএস অনুসারে ৫.৫)। এটি ছিল একটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প এবং এর উৎপত্তিস্থল ঢাকার কাছে হওয়ায় এর প্রভাব অপেক্ষাকৃত বেশি অনুভূত হয়।
প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দেওয়া বিবরণ অনুযায়ী, ভূমিকম্পে বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাজধানীতে অন্তত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকার বংশালে/আরমানিটোলার কসাইটুলি এলাকায় একটি ভবনের রেলিং ভেঙে পড়ে তিনজন পথচারীর মৃত্যু হয়। এছাড়া, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় একটি ভবনের দেয়াল ধসে দশ মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভবনে ফাটল এবং পলেস্তরা খসে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার সূত্রাপুর স্বামীবাগ এলাকায় একটি ৮ তলা ভবন অন্য একটি ভবনে হেলে পড়েছে। কলাবাগানেও একটি ৭ তলা ভবন হেলে পড়ার খবর পাওয়া যায়।বাড্ডা লিংক রোড এবং হাতিরঝিল সংলগ্ন মধুবাগ এলাকায়ও বহুতল ভবন হেলে পড়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বাড্ডার হেলে পড়া ভবনের লিফট ছিঁড়ে পড়ার খবরও রয়েছে।

আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর)-এর একটি ভবনের দুই দেয়ালের সংযোগস্থলে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে আরমানিটোলার কসাইটুলিতে আটতলা ভবন ধসে পড়ার যে খবর পাওয়া গিয়েছিল, ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে যে ভবনের কোনো বড় ক্ষতি হয়নি, কেবল পলেস্তরা ও কিছু ইট খসে পড়েছে। খিলগাঁওয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে ইট পড়ে একজন আহত হয়েছেন। বারিধারা এবং মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়, তবে ভূমিকম্পের কারণে আগুন লেগেছে কিনা তা নিশ্চিত নয়।

ভূমিকম্প শুরু হওয়ার সাথে সাথেই রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষজন তীব্র আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে এবং নিজেদের ঘর ও কর্মস্থল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। আতঙ্কিত অনেকেই ভবন হেলে পড়া বা ফাটল দেখা যাওয়ার খবর ফায়ার সার্ভিসকে জানান। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুততার সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে সাড়া দিয়ে হতাহতের সন্ধান এবং ক্ষয়ক্ষতির নিরূপণের কাজ শুরু করেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আপাতত আফটারশকের কোনো সম্ভাবনা নেই, তবে সতর্ক থাকা জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বারংবার সতর্ক করে আসছেন যে অপরিকল্পিতভাবে এবং বিল্ডিং কোড না মেনে নির্মিত ভবনগুলো মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেও মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে, যা আজকের ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হলো।

